২৪ ডিসেম্বর ২০২০
একবার এক লোক বনে গেল মোষ তাড়ানোর জন্য। গ্রামের লোকজন হাহুতাশ করছিল, বনের মোষ এসে ফসল নষ্ট করে যাচ্ছে। কেউ তাড়াচ্ছে না। আমরা কি খেয়ে বাঁচব?
কাছের মানুষেরা তাকে বলেছিল, ফসল যার মোষ তাড়ানোর দায়িত্বও তার। তুই অযথা হুজ্জত মাথায় নিবি কেন? লোকটা ছিল কিঞ্চিত পাগল কিসিমের। দুনিয়ার নিয়ম মানতে রাজি না। মোষ তাড়িয়ে সে আম্পাব্লিকের উপকার করবেই। তখন কাছের মানুষেরা পরামর্শ দিলো, আচ্ছা বাবা বুঝলাম তুই অনেক উচ্চাঙ্গের মানুষ। অন্যের উপকার না করলে তোর জীবন বৃথা। অন্তত খাবারটা ওই কৃষকদের কাছ থেকে নিস। কিন্তু পাগলাটে লোকটা নিজের খেয়েই বনের মোষ তাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল।
জঙ্গলে গিয়ে লোকটা একেবারে এলাহী কাণ্ড দেখতে পেল! প্রচুর লোক এখানে জড়ো হয়েছে। তারা মোষও তাড়াচ্ছে না, অন্যদের তাড়াতেও দিচ্ছে না। পাগলাটে লোকটা প্রশ্ন করল, কেন ভাই? মোষ তাড়ালে প্রব্লেম কি? তারা বলল, মোষ তাড়ানো একটি চমৎকার ব্যবসা। কৃষকরা আমাদের পয়সা দিবে আমরা মোষ তাড়াবো। উইন উইন সিচুয়েশন! বাট তারা চায় কেউ এই কাজটা ফাও করে দিক। যে কাজ করলে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হবে, সে কাজ কেন তারা ফাও করাতে চাইবে?
পাগলাটে লোকটা এসব যুক্তি মানল না। সে কৃষকের টাকা তো দূরের কথা খাদ্যও গ্রহণ করতে রাজি নয়। সে শুধু মোষই তাড়াল না, ওই যৌক্তিক লোকগুলোকেও তাড়িয়ে দিল।
তারপর অনেকদিন কেটে গেল। গ্রামের মানুষ এক সময় বনের মোষের আক্রমণের কথা ভুলে গেল। কিন্তু ব্যবসা হারানো মানুষগুলো তা ভুললো না। তারা ফিরে এল। এমন সম্ভাব্য চমৎকার ব্যবসা ভণ্ডুলকারী ওই পাগলাটে লোকটাকে শায়েস্তা করে ব্যবসার নয়া দিগন্ত উন্মোচন করতে এবার বদ্ধপরিকর তারা।
শুরুতেই তারা কৃষকদের কিছু মোষ মেরে দায় চাপালো পাগলাটে লোকটার উপর। বলল, এই লোক মোষ দেখলেই পাগল হয়ে যায়। ঘরের মোষ আর বনের মোষের পার্থক্য বোঝে না। বোনের মোষ যেহেতু এখন আর নাই, আমাদের দরকার এই লোকটাকে গ্রামছাড়া করা, নইলে ঘরের মোষও সব শেষ হয়ে যাবে।
কৃষকরা এবার এক জোট হয়ে লোকটাকে গ্রামছাড়া করল। মোষের বিরুদ্ধে যারা জোট বাঁধতে পারেনি, নিজের বিরুদ্ধে তাদের এক জোট হতে দেখে লোকটা খুশি হল। গ্রামছাড়া হয়েও সে ওদের আশীর্বাদ করে বলল, তোমাদের এই ঐক্য ধরে রেখ। নইলে আমার অনুপস্থিতিতে আবার মোষ এসে সব খেয়ে ফেলবে। ওরা বলল, পৃথিবীতে বনের মোষ বলে কিছু নেই। সবই ছিল তোমার উদ্ভট প্রচারণা।
পাগলাটে লোকটার কাছের লোকেরা এবার নসিহতের ভলিউম এ টু জেড নিয়ে হাজির হল। তারা বলতে শুরু করল, বলেছিলাম না উপকার করা খারাপ কাজ? এবার বিশ্বাস হল তো? পাগলাটে লোকটা এবার আরও উচ্চাঙ্গের পাগল হয়ে গেছে। পার্থিব কোন কিছুই আর তাকে আকৃষ্ট করে না। সে আকর্ণ বিস্তৃত হাসি দিয়ে বলল, হ ভাই তোরা জিতছস। আমি না হয় চিরকাল হারুই থাকলাম।
মেয়েটা বিরক্ত হচ্ছিল কেন আল্লাহ মালুম। উসখুস করছিল। গাড়ির দরজা খুলে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
-এই যে মিস্টার এইখানে গাড়লের মত দাঁড়িয়ে গুলতানি মারছেন কেন?
-তাতে আপনার প্রবলেম কি? আমার মা তো আপনার বয়সী নন!
-ইডিয়ট। রাস্তায় দাঁড়িয়ে মেয়েদের উত্যক্ত করবে। আর কিছু বললে বলবে, আপনি বলার কে? আপনি কি আমার মা!
-এই যে সিস্টার! আমি কোথায় আপনাকে উত্যক্ত করলাম!
-এই যে অন্ধজন!..
একটি বিশ্বমানের চলচ্চিত্র বানাবো। প্রয়োজনীয় আলাপচারিতা সেরেছিলাম ছ'মাস আগের এক সকালে। উপস্থিত ছিল তিনজন অশরীরি, দুটো চড়ুই, সকালের বাতাস এবং গুটিকয় সিনেমানবিস। ভোর হলেই এখন তাই বাতাসের স্নিগ্ধ আঁচল ঘরময় ওড়াওড়ি করে। কিচির মিচির করে ঘরকুনো চড়ুই। সুবাদে ভোরটা এখন প্রাণময়। দিনগুলো সৃজনশীল।
খুব দ্রুত এগোয় সিনেমার কাজ। গল্পটা অসাধারণ। মু্ক্তিযুদ্ধের। মেরে দেয়া নয়। সাম্প্রতিক সময়ের অসম্ভব প্রতিভাধর এক গল্পকার লিখেছেন এটি।..
হিজলতলির মাঠে একটা লাশ আমাকে তাড়া করছিল। ওকে ত্যাগ করা আত্মাই নাকি আমি। আমাকে হয় নিজ দেহ ত্যাগ করতে হবে নতুবা দুই দেহেরই দায়িত্ব নিতে হবে।
এক আত্মা দুই দেহে থাকে কিভাবে? আমার প্রশ্নে মাঠ কাঁপিয়ে হাসল মড়া। বলল, সে তোমার সমস্যা। আমাকে ত্যাগ করে আরেকজনের ভেতর সুরুৎ করে ঢুকে যাবার সময় মনে ছিল না তুমি দুই দেহের মালিক হতে যাচ্ছ!
কুকুরটি ভয়ানক ভাবে তেড়ে এল। আমার বুক লক্ষ্যে লাফ দিতেই মনে হল ওটা কুকুর নয় হায়েনা। ভয়ে চোখ বন্ধ করলাম। হাত দুটো সামনে। যদি কোন অলৌকিক উপায়ে ওরা আমাকে রক্ষা করে! কিংবা হতে পারে সম্পূর্ণ অভ্যাসবশে ওরা সামনে চলে গেছে।
কোন কিছুই আমার উপর আছড়ে পড়ল না। ব্যাপার কি! কুকুর অথবা হায়েনা কি হাওয়া হয়ে গেল? চোখ মেলতেই দেখি একটা ফুটপাথে শুয়ে..
বটের ছায়ায় লীন হতে হতে আঁধারে মিশে গেলে একটি অংক রাজহাঁস হয়। অংকের পিঠে প্রেম বসিয়ে পিথাগোরাসের উপপাদ্যকে প্রধান পুকুরপাড়ে মরে যেতে দেখি। পুকুরটি ঝোপের ডালে জোনাকের ঝারবাতি সাজিয়ে কাঙালি ভোজে ব্যস্ত হলে উল্কাপতনের শব্দে কাঁপে জনতার খনি। সেই সব দিনে গজিয়ে ওঠা পাহাড়ের চূড়ায় চোখের পর চোখ বসিয়ে বৈজ্ঞানিক কল্পকথা লেখা হতো বলে প্রেক্ষাগৃহে উল্কাবিদ্যার বদলে উৎপাদিত হতো ইভটিজারের এনাটমি...
১.
মাঝে মাঝে ভূত চাপে সাইফুলের কাঁধে। কোনদিন নদীপথে স্বরূপকাঠি, আটঘর কুড়িয়ানা, ঝালকাঠি, বরিশাল কিংবা একেবারেই কাছের কাউখালি। কোনদিন সাইকেলে চেপে ডুমুড়িয়া, টগড়া, নামাজপুর, শংকরপাশা কিংবা নিদেনপক্ষে বলেশ্বরের পাড়। আজ চেপেছে রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ির ভূত। একই পাড়ার বাসিন্দা হওয়ায় মশিউর আর বাবুল ওর সবসময়ের সাথী। আমাকেও যেতে হয়। ভেতরে বাস করা পর্যটক মন শান্তি দেয় না। পড়াশুনায় চলে বন্ধাত্ব।
আমাদের প্রস্তুতি সেতুকে..
সভ্যতার ইতিহাস নিয়ে আমরা তর্ক করছিলাম। ও বলছিল, মানুষের ইতিহাস মূলত স্রষ্টাকে অস্বীকারের ইতিহাস। আমি বলেছিলাম, মানুষের ইতিহাস হল স্রষ্টাকে চেনার এবং জানার ইতিহাস। ওর কথা হল, জ্ঞানলোকে স্রষ্টা থাকে না। ওই ভদ্রলোক বা মহিলা যেখানে থাকে সেটা জ্ঞান নয়, বিশ্বাস! এই বিশ্বাসকেই প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এগিয়েছে সভ্যতা।
আমার তর্ক ভাল লাগে না। কেননা আমি জানি, তর্ক করে জ্ঞান লাভ হয় না।..