ছোট গল্প
28 August 2021
পুরনো আলমারিতে বইটা পেয়েছিলাম। সোলেমানি খোয়াব নামা। ঘুমের মধ্যে কি দেখলে বাস্তবে কি ঘটে তার বিবরণ এখানে। কে না জানে চোখ বন্ধ করলে আর কিছুই দেখা যায় না! অথচ এখানে শুধু চোখ বন্ধ নয়, চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে যাওয়ার পর কিছু দেখা এবং তার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে!
এমন একটা অবাস্তব বিষয়ে বই লেখার মত আহাম্মক লোকও দুনিয়ায় ছিল ভাবলেই হাসি পায়। বন্ধুদের বইটা দেখাই আর সবাই মিলে হাসাহাসি করি। এমনই এক হাসাহাসির আসরে এক বৃদ্ধ জানালেন খুব ছোটবেলায় উনি একবার ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কি যেন দেখেছিলেন। কথাটা পরদিন তার মাকে জানিয়েছিলেনও। কিন্তু তিনি হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই ঘটনার দশদিন পর একটা এক্সিডেন্টে তার মা বাবা দুজনই মারা যাওয়ার পর তিনি স্মরণ করতে পেরেছিলেন যে, স্বপ্নে তিনি ওই দুর্ঘটনার ভিডিওটাই দেখেছিলেন।
এই ঘটনার পর বইটা নিয়ে গভীর অধ্যয়নের সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু আমরা কেউ কোনোদিন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কিছু দেখিনি। এমনকি যেই বৃদ্ধ দেখেছিল বলে দাবি করেছিলেন, তাকেও পরবর্তীতে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। অগত্যা আমরা ঠিক করলাম যেভাবেই হোক জীবনে অন্তত একটা হলেও স্বপ্ন দেখব!
বইটিতে একটা কথা লেখা আছে, অনেক ক্ষেত্রে মানুষ দিনে যা করে রাতে ঘুমের মধ্যে তাই দেখে। আবার ঘুমের মধ্যে এমন কিছুও দেখে বাস্তবে যার মুখোমুখি সে কখনো হয়নি। এই নতুন ঘটনাগুলোই মূলত ভবিষ্যতের ঘটনা। এগুলোকে ব্যাখ্যা করতে পারলেই ভবিষ্যত জানা যায়!
স্বপ্ন সংক্রান্ত গবেষণার মধ্যেই জানতে পারলাম স্বপ্ন দেখা, স্বপ্ন গবেষণা, স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা এমনকি স্বপ্ন নিয়ে আলাপ আলোচনাও এদেশে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ!
কয়েকশ বছর আগে এই দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখতে দেখতে এতই এক্সপার্ট হয়ে উঠেছিল যে, কবে কখন কি ঘটবে সব বলে দিতে পারত! ফলে সবাই হয়ে উঠেছিল স্বপ্নবিলাসী। দিন রাত তারা শুধু স্বপ্নই দেখত। স্বপ্ন দেখতে দেখতে অবস্থা এমন হয়েছিল যে, কেউ আর কাজ করত না। কারণ তারা জানত যে, আর কয়েক মাস পর দুর্ভিক্ষে এদেশে কয়েক লাখ মানুষ মারা যাবে। কার সাধ্য স্বপ্নকে মিথ্যা প্রমাণ করে! বাস্তবে হয়েছিলও তাই।
মানুষ যখন স্বপ্ন দেখতে দেখতে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে গেল তখনি দৃশ্যপটে হাজির হল দিবলুল আকরাম! এক রক্তাপ্লুত বিপ্লবের মাধ্যমে তিনি উৎখাত করলেন স্বপ্ন প্রজন্মকে। ক্ষমতা দখল করেই তিনি স্বপ্নের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করলেন। প্রথমে শব্দটি অভিধান থেকে মুছে দিলেন তিনি। যেসব বইয়ে এ শব্দটি আছে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করলেন। প্রতিটি মানুষকে এমন কিছু মনোলৌকিক সাজেশন দেয়া হল যাতে তারা ঘুমের মধ্যে আর কিছুই না দেখে।
এরপরই রাতারাতি দেশের দৃশ্যপট পরিবর্তিত হতে লাগল। যেখানে দিনরাত ক্ষুধার্ত মানুষের মিছিল দেখা যেত সেখানে শুরু হল খাদ্য মিছিল। উৎপাদন এতই বেড়ে গেল যে, গোটা আফ্রিকা মহাদেশকে আমরা টানা দশ বছর খাইয়েছিলাম!
কথাগুলো যে মিথ্যা তা বুঝতে অসুবিধা হল না। কারণ আফ্রিকা বর্তমান দুনিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধ মহাদেশ। তাদেরকে আমরা খাওয়াব কিভাবে! হয়ত তারাই আমাদের খাইয়েছিল। ধূর্ত লেখক ঘটনা টেম্পারিং করে ইতিহাস উল্টিয়ে দিয়েছে!
এখন দেশে তেমন কোন অসন্তোষ বা অশান্তি না থাকলেও বেশ বুঝতে পারলাম- যখন স্বপ্নের মাধ্যমে ভবিষ্যতের সব কথা জানতে পারতাম তখন নিশ্চয়ই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী জাতি ছিলাম আমরা। সুতরাং স্বপ্ন জমানায় ফেরার জন্য আমরা একটা গোপন দল গঠন করলাম।
গোপন দল তৈরির বিষয়টা গোপন থাকল না। আমাদের ধরে নিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত এক জায়গায় ফেলে রাখা হল। পেটে ক্ষুধা, গলায় তৃষ্ণা। আমরা খাদ্য আর পানি চাইলাম। তারা বলল, তোমাদের খাদ্যের কি দরকার? স্বপ্নের মধ্যেই যা ইচ্ছা খেয়ে নাও। কেউ তো মানা করছে না।
এই প্রথম আমরা স্বপ্নের মধ্যে খাওয়ার বিষয়টি জানতে পারলাম। আর কি আশ্চর্য আমরা সবাই একসাথেই সে রাতে খাওয়ার স্বপ্ন দেখলাম। অথচ তাতে আমাদের পেট ভরল না। দিনের পর দিন যেতে লাগল। স্বপ্নের মধ্যে আমাদের খাদ্যের জৌলুশ বাড়তে লাগল। আর এদিকে আমরা দিন দিন শুকিয়ে যেতে লাগলাম।