ছোট গল্প

টাইম ট্রাভেলার - মৃন্ময় মিজান

28 August 2021

টাইম ট্রাভেলার

মৃন্ময় মিজান

হঠাৎ কি যেন হল আমার। মাথা ঝিমঝিম করে উঠল। চোখ ঘোলাটে হয়ে এল খানিকটা। পা ও টলে উঠল যেন। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম। ধীরে ধীরে ঝিমঝিম ভাবটা কমে এল।

পাবলিক লাইব্রেরির সামনে দাঁড়িয়ে ভেতরে ঢুকব কিনা ভাবছি। কয়েকটা ছেলে মেয়ে সিঁড়িতে বসে ছবি তোলার পোজ দিচ্ছে। কি যেন একটা হুট করে মনে পড়তে গিয়েও মনে পড়ল না।

লাইব্রেরির দিকে দু কদম এগুতেই মনে পড়ল। একটা ছবি। ঠিক এদের মতই বসেছিল ওরা। পাঁচটি মেয়ে, দুটো ছেলে আর এক পিচ্চি। এরা কি তাহলে ছবির জগত থেকে বের হয়ে আসা কেউ!

ছবিটা আমার চোখে ভাসছে। অথচ কোথায় দেখেছি মনে করতে পারছি না। একে একে এদের সবার উপর দৃষ্টি বুলিয়ে নিচ্ছি। আর তখনি পেছনের সারিতে বসা বাম থেকে দ্বিতীয় মেয়েটি বলে উঠল, এই ছেলে! এভাবে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে আছো কেন? যাও এখান থেকে।

একবার মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছি আবার নিজের চেহারা মনে করার চেষ্টা করছি। এই মেয়ে নির্ঘাৎ আমার কুড়ি বছরের ছোট হবে! অথচ আমাকেই কিনা সম্বোধন করছে এই ছেলে বলে! নাহ একে তো খানিকটা জ্ঞান দিতেই হয়!

ওকে কসে একটা ঝারি মারতে গিয়ে মনে হল, এই মায়াবী মুখটা ছবি ছাড়াও অন্য কোথাও দেখেছি! কোথায়? কোথায়? মাথা চুলকিয়ে খুসকি ঝরানো ছাড়া আর কোন কাজ হল না। এবার মেয়েটা উঠে এল। অন্যরা ছবি তোলা শেষে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে হা হা হি হি করছে। মেয়েটা বলছে, কি হয়েছে তোমার? বোকার মত দাঁড়িয়ে আছ কেন?

পূর্ণ দৃষ্টি মেলে মেয়েটাকে দেখলাম। এতটুকুন একটা মেয়ে। হয়ত নাইন কিংবা টেনে পড়ে। সে কিনা আমাকে তুমি করে বলছে! বললাম, কোন ক্লাসে পড় তুমি? আমার তুমি সম্বোধনে কিঞ্চিৎ আহত কিঞ্চিৎ ক্ষুব্ধ হয়ে সে বলল, তোমার তো সাহস কম না! আমাকে তুমি করে বলছ! জানো? আমি এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব!

বললাম, তা হয়ত হবে। কিন্তু আমি যে আরো এক যুগ আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়েছি তার কি হবে? এবার মেয়েটি পূর্ণ দৃষ্টিতে আমাকে দেখল। তারপর মাথায় হাত দিয়ে জিভে কামড় দিয়ে বলল, হায় ভগবান! আমার চোখ কি পুরোটাই গেছে! আপনার মত মুরুব্বি একজন মানুষকে আমি তুমি বলতে গেলাম কোন আক্কেলে!

কী যন্ত্রণা! আমি মেয়েটির সিনিয়র সে ঠিক আছে। তাই বলে মুরুব্বি? মুরুব্বি তো বুড়োদের বলে! বললাম, তোমার জিভ কি কখনো সঠিক শব্দের নাগাল পাবে না? একবার বলছ তুমি। আবার বলছ মুরুব্বি! মেয়েটি আবারও জিভে কামড় দিয়ে বলল, স্যরি আংকেল!

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি নাহয় আমাকে তুমি করেই বইল! এবার ফিক করে হেসে ফেলল বজ্জাত মেয়েটা। বলল, ছেলেদের নিয়ে এই এক মুশকিল! তুমি বললে দোষ। মুরুব্বি বললে দোষ। আংকেল বললেও দোষ। এমনকি ভাইয়া বললেও দোষ। আচ্ছা আমি কি আপনাকে ভাইয়া বলব? বলেই ভাইয়ায়া বলে এমন ভাবে একটা জ্বালা ধরানো ডাক দিল যে, ইচ্ছে হল পালিয়ে যাই।

কিন্তু না। মেয়েটি আমার পালানোর পথ বন্ধ করে দিয়েছে। ডান হাত দিয়ে আমার বাম হাত লুফে নিয়েছে। বলছে, আচ্ছা আপনাকে আমার এত পরিচিত মনে হচ্ছে কেন? আর আপনাকে আমার জুনিয়রই বা মনে হচ্ছে কেন? কে আপনি? কোথায় দেখেছি আপনাকে?

তখন আবারও ছবিটার কথা মনে পড়ল। ছবির মানুষগুলো ঠিক এদের মতই পোশাকে ছিল। চেহারাও অবিকল এদের মত। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলাম, যে ছবি মাত্রই তোলা হচ্ছে তা আমি আগে কি করে দেখলাম? আমি কি তবে ভবিষ্যৎ থেকে আসা কেউ? মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা এটা কোন সাল। উত্তরে মেয়েটা যা বলল, তাতে ভয়ে আমার শরীরের সবগুলো পশম দাঁড়িয়ে গেল! বললাম, এটা যদি আশির দশকই হবে তাহলে আমি এত বড় কেন? মেয়েটা অবাক কণ্ঠে উচ্চারণ করল, টাইম ট্রাভেলার!

আমি কি তবে সত্যিই টাইম ট্রাভেল করছি? মেয়েটা সত্যিই কি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে? এতগুলো জলজ্যান্ত মানুষ সামনে দাঁড়িয়ে থাকার পরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য মেয়েটার হাতে চিমটি কাটলাম। মেয়েটা মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার? বললাম, আমার খুব পিপাসা পেয়েছে। চল শাহবাগ থেকে কিছু খেয়ে আসি!

মেয়েটা ওর সঙ্গীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমার সাথে লাইব্রেরির গেটের দিকে এগুলো। পথে দুজন মিলে বকুল ফুল কুড়ালাম। মেয়েটা বলল, আপনি খুব ইন্টারেসটিং মানুষ। মনে হচ্ছে, আপনাকে আমি চিনি। অথচ চিনি না! আপনি যদি সত্যিই টাইম ট্রাভেলার হন তাহলে আপনার তো মনে থাকার কথা সব! বললাম, এটা যদি আশির দশক হয়, আমি যদি আশির দশকেও এত বড় হয়ে থাকি তাহলে আমি টাইম ট্রাভেলার সন্দেহ নাই। তবে তোমাকে আমি ঠিক মনে করতে পারছি না। শুধু এতটুকু মনে পড়ছে যে, তোমাদের সবাইকে আমি একটা ছবিতে দেখেছি। যদিও ঠিক মনে করতে পারছি না, ছবিটা দেখেছি কোথায়!

আমরা দুজন জাদুঘরের সামনে পাশাপাশি হাঁটছি। বলছি, ছবিটা কোথায় দেখেছি মনে করতে পারলেই সব রহস্যের জট খুলে যেতো? ও বলছে, আমি ত টাইম ট্রাভেলার নই। তাহলে আপনাকে আমার কেন এত পরিচিত মনে হচ্ছে! আর সত্যি বলতে কি আপনাকে এখনো আপনি বলতে অস্বস্তি হচ্ছে! মনে হচ্ছে আপনি আমার অনেক ছোট!

আমি কিছু একটা বলার জন্য ঘাড় ঘুরিয়ে ওর মুখের দিকে তাকালাম। কিন্তু হায়! ও কোথায়! আমি তো একাই হাঁটছি দুপুরের শুনশান ফুটপাথে! একটা ভয় চেপে ধরল আমাকে! আমি কি এখন সত্যিই আশির দশকে আছি? ফুটপাথ এত নিরব কেন? আমার এত সাধের বউটা কি তাহলে নাই হয়ে যাবে? আমার বাচ্চা কাচ্চা?

শাহবাগ মোড়ের দিকে তাকালাম। কিছুক্ষণ আগে যেমন দেখে গেছি, তেমনি রয়েছে। স্বস্তির একটা নিশ্বাস আমার অজান্তেই বাতাসের সাথে মিলিত হল! কিন্তু মিষ্টিমুখ মেয়েটার জন্য মনের কোথায় যেন একটা অচেনা অনুভব খচখচ করতে থাকল!

প্রথম প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২১

মৃন্ময় মিজানের আরো গল্প

28 August 2021

টাইম ট্রাভেলার

মৃন্ময় মিজান

হঠাৎ কি যেন হল আমার। মাথা ঝিমঝিম করে উঠল। চোখ ঘোলাটে হয়ে এল খানিকটা। পা ও টলে উঠল যেন। চোখ বন্ধ করে..

28 August 2021

নপুংসক সময়ের গান

মৃন্ময় মিজান

১.

আমাদের স্পর্ধিত শ্লোগান খা-খা দুপুরকে বিদীর্ণ করে এগিয়ে যায়। টিয়ারশেলের ঝাঁঝালো গন্ধ, তীক্ষ্ণ হুইসেল, চোরাগোপ্তা ইটের আঘাতে আহতের চিৎকার আর রক্তের আখ্যান..

Get In Touch — Feel free to drop me a line —

  • Email
    info@mrinmoymizan.com
  • Phone
    +8801711167062
  • Website
    www.mrinmoymizan.com
Submit
Your email sent Successfully, Thank you.
Error occurred while sending email. Please try again later.