ব্লগ

সর্বহারার রাজ সোনার পাথর বাটি - মৃন্ময় মিজান

১৬ আগস্ট ২০২১

সর্বহারার রাজ সোনার পাথর বাটি

মৃন্ময় মিজান

পৃথিবীর নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত এলিটদের হাতেই থাকে। ধর্ম বলেন, রাষ্ট্র বলেন আর সমাজই বলেন না কেন।

এলিটতন্ত্র অত্যাচারী হলে সাধারণ মানুষ এলিটতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়। তিক্ত সত্য হল সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবার জন্য নিজেদের মধ্য থেকে যাদেরকে নেতা বানায় বা যে সাধারণ মানুষগুলো অন্যদের সংঘবদ্ধ করে নেতা হয়ে ওঠে তারা মূলত এলিটই হয়ে ওঠে। এই নয়া এলিটরা প্রায়ই আন্দোলনের বুকে ছুরি মারে, আন্দোলনকে স্যাবোটাজ করে। এগুলো মূলত তাদের নয়া শ্রেণী সচেতনতার ফল। অনেক নয়া এলিট অবশ্য শ্রেণী সচেতনতার অভাবে বা বিদ্যমান এলিটতন্ত্রের বদলে নিজস্ব এলিটদের ক্ষমতায় আনার জন্য এলিটদের বিরুদ্ধে আপাত অবস্থান নিয়ে থাকে।

যদিও কোন কোন এলিট নয়া এলিটতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরও সাধারণ এবং এলিট সবার জন্যই সুষম শাসন প্রবর্তনের জন্য কাজ করে যেতে পারে। এমন যারা করতে সমর্থ হয় তারাই মানবজাতিকে সত্যিকার অর্থে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে।

প্রশ্ন উঠতে পারে, এলিটতন্ত্র কি আসলেই সর্বহারার অধিকার স্বীকার করে? কিংবা করলেও কি তা বাস্তবায়নে আন্তরিক হয়? আর যদি বাস্তবায়ন করেও তা কতদিন স্থায়ী হতে পারে? একই সাথে যে প্রশ্নটি খুবই প্রাসংগিক তাহলো- সর্বহারার রাজ কি আদৌ প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব?

যারা রাজনীতি করেন বা রাজনীতি সচেতন তাদেরকে এই বিষয়গুলো নিয়ে খুব যত্নের সাথে ভাবতে হবে।

আমার ভাবনা হল, সর্বহারার রাজ কথাটা সোনার পাথর বাটির মতই একটি অবান্তর বিষয়। কারণ সর্বহারার মধ্য থেকে যে লোকটি নেতা হল সেই এলিট হয়ে গেল। তার জন্য সাধারণ মানুষ জীবন দিতে প্রস্তুত হয়ে যায়, তার নির্দেশে যে কোন কাজ করার জন্য রাজী হয়ে যায়। অর্থাৎ সেই আগের মত অবস্থাই তৈরি হল। পার্থক্য এটুকুই- আগের এলিটরা হয়ত জোর করে আদেশ মানতে বাধ্য করত। এখনকার এলিটের আদেশ এরা মন থেকেই মানে। এই মন থেকে মানাটা বরং সাধারণের জন্য আগের থেকে বেশি ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন, সে যতই সাধারণ ঘরের হোক না কেন, সে মূলত এলিটই হয়ে গেল। সুতরাং সর্বহারার রাজ প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টাকে আমি স্বীকার করি না।

আমি মনে করি রাষ্ট্র, ধর্ম, সমাজ এগুলো এলিটরাই চালাবে। এইটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা অস্বীকার করা বোকামি।

এখন প্রশ্ন হল, এলিটরা কি সাধারণ মানুষকে নিজের ভাই ভেবে ভালবাসতে পারে? তারা কি সাধারণের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলো থেকে এলিটতন্ত্রকে দূরে রাখতে পারে? আমি মনে করি, পারে। নিজের ভাল বুঝলে এলিটদের অবশ্যই সাধারণ মানুষের জন্য কল্যাণকর কাজই বেশি বেশি করা উচিত।

ধরে নিলাম ভাল একটা এলিটতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হল। যে এলিটতন্ত্র সর্বহারা এবং এলিট উভয় সম্প্রদায়ের জন্যই একটি সুষম ব্যবস্থা প্রণয়নে সমর্থ হল। এখন প্রশ্ন হল, এই ভাল এলিটতন্ত্র কি আদৌ টিকবে? কারণ সর্বহারার অধিকার আর এলিটের অধিকার কিন্তু পারস্পরিক সাংঘর্ষিক। এ ক্ষেত্রে দরকার পড়বে এমন কিছু ভ্যালুজ ডেভেলপ করা যাতে এলিটও মনে করবে তার লাভ হচ্ছে সর্বহারাও মনে করবে তার লাভ হচ্ছে। একই সাথে এমন একটি সিস্টেম ডেভেলপ করা দরকার যা হবে শ্রেণী নিরপেক্ষ।সিস্টেম কতটা উন্নত এবং শ্রেণী নিরপেক্ষ হল এবং সেই সিস্টেম অক্ষুণ্ণ রাখার ম্যাকানিজম কতটা চেকড এন্ড ব্যালান্সড হল তার উপরই মূলত নির্ভর করবে একটি ভাল শাসন কতদিন দীর্ঘায়িত হবে।

এলিট এবং সর্বহারা সবার জন্য সুষম একটি শাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য ভাল একদল এলিটের শাসন যেমন জরুরি তেমনি জরুরি একটি শ্রেণী নিরপেক্ষ সিস্টেম ডেভেলপ করা

মৃন্ময় মিজানের আরো ব্লগ

Get In Touch — Feel free to drop me a line —

  • Email
    info@mrinmoymizan.com
  • Phone
    +8801711167062
  • Website
    www.mrinmoymizan.com
Submit
Your email sent Successfully, Thank you.
Error occurred while sending email. Please try again later.